Thursday, July 20, 2017

চন্দ্রনাথ পাহাড় | চন্দ্রনাথ মন্দির | মেঘ পাহাড়ের মিতালি | সীতাকুন্ড,চট্রগ্রাম | Chandranath Hill, Shitakundu | Chittagong | Bangladesh

চন্দ্রনাথ পাহাড়- বাংলাদেশের সীতাকুন্ডে অবস্থিত প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি।চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৪কি.মি. পূর্বে চন্দ্রনাথ পাহাড় অবস্থিত। সীতাকুণ্ডের পূর্বদিকে চন্দ্রনাথ পাহাড় আর পশ্চিমে
সুবিশাল সমুদ্র ।

ইতিহাস

কথিত আছে নেপালের একজন রাজা স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে বিশ্বের পাঁচ কোনে পাঁচটি শিবমন্দির নির্মান করেন। এগুলো হলো নেপালের পশুপতিনাথ, কাশিতে বিশ্বনাথ, পাকিস্তানে ভুতনাথ, মহেশখালীর আদিনাথ আর সীতাকুন্ডে চন্দ্রনাথ।
প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ ও ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় প্রাচীন কালে এখানে মহামুনি ভার্গব বসবাস করতেন।অযোদ্ধার রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র তার বনবাসের সময় এখানে এসেছিলেন।মহামুণি ভার্গব তাঁরা আসবেন জানতে পেরে তাঁদের স্নানের জন্য তিনটি কুণ্ড সৃষ্টি করেন এবং রামচন্দ্রের এখানে ভ্রমণ কালে তাঁর স্ত্রী সীতা এই কুণ্ডে স্নান করেন।এই কারনেই এখানকার নাম সীতাকুণ্ড বলে অনেকে ধারনা করেন।



নব্যপ্রস্তর যুগের দিকে সীতাকুণ্ডে মানুষের বসবাস শুরু হয় বলে ধারনা করা হচ্ছে;এখান থেকে আবিষ্কৃত প্রস্তর যুগের আসামিয় জনগোষ্ঠীর হাতিয়ার গুলো তারই স্বাক্ষ বহন করে।১৮৮৬ সালের দিকে এখানথেকে নব্যপ্রস্তর যুগের অশ্মীভূত কাঠের তৈরী হাতিয়ার পাওয়া যায় বলে ভারতীয় প্রত্নতত্ববিদ রাখালদাশ বন্দোপাধ্যায় তার বই "বাংলার ইতিহাস (১ম সংখ্যা ১৯১৪সাল)"এ উল্লেখ করেন।১৯১৭ সালের দিকে ব্রিটিশ খনিতত্ববিদ ডঃ যে কোগিন ব্রাউন প্রাগৈতিহাসিক যুগের কিছু কেল্ট এবং প্রচুর পরিমানে নুড়িপাথর আবিস্কার করেন, তবে এগুলো প্রাগৈতিহাসিক কোন স্থাপনা বা অস্ত্র তৈরীর কাজে ব্যবহৃত হতো কিনা এবং কোন সময়কার তা প্রত্নতত্ববিদরা সঠিক ভাবে জানাতে পারেননি।




তবে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতাব্দীর দিকে চট্টগ্রাম অঞ্চল আরাকান রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল।পরবর্তী শতাব্দীতে এই অঞ্চল পাল সম্রাট ধর্মপাল দ্বারা (৭৭০-৮১০ খ্রীঃ)শাসিত হয়।বাংলার সুলতানি বংশের প্রথম সুলতান সোনারগাঁও এর সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ্ (১৩৩৮-১৩৪৯ খ্রীঃ)১৩৪০ খ্রীষ্টাব্দে এ অঞ্চল অধিগ্রহন করেন।১৫৩৮ খ্রীষ্টাব্দে বাংলার সুলতানি বংশের শেষ সুলতান সুলতান গীয়াস উদ্দীন মুহাম্মদ শাহ্ যখন সুর বংশের শের শাহ্ সুরির হাতে পরাজিত হন তখন এ এলাকা আবার আরাকান রাজ্যের অর্ন্তভূক্ত হয়।১৫৩৮ থেকে ১৬৬৬ সালের মধ্যে পর্তূগীজরা চট্টগ্রাম অঞ্চলে আসে এবং এখানে আরাকানীদের বংশধরদের সাথে একত্রে এই এলাকা শাসন করতে থাকে।এ এলাকা প্রায় ১২৮ বছর তাদের শাসনাধীন ছিল।১৫৫০ সালের দিকে এর কিছু এলাকা পাগনার আক্রমনকারীদের দখলে চলে যায়।১৫৬৬সালে মুঘল সেনাপতি বুজরুগ উম্মে খান এ এলাকা দখল করে নেন।

১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার শেষ নবাব সীরাজদ্দৌলার ইংরেজ ইষ্টইন্ন্ন্ডিয়া কোশ্পানীর কাছে পরাজয়ের সাথে সাথে বাংলার অন্যান্য অংশের মত সীতাকুণ্ডও ইংরেজদের শাসনে চলে যায়।বাঙ্গালী জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানকার অবাঙ্গালী জনগোষ্ঠী দলগত ভাবে এই এলাকা ত্যাগ করে এবং পার্বত্য অঞ্চলেরদিকে চলে যায়।ফেব্রুয়ারী ১৯০৮ সালে স্বদেশী আন্দোলনের সময় এ এলাকা স্বদেশীদের হাতে চলেযায় এবং কেন্দ্রীয় ভাবে কলকাতা থেকে নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে।ভারতীয় পেট্রোলিয়াম কোম্পানী ১৯১০ সালে এখানে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের কাজ শুরু করে এবং এটিই পূর্ব বাংলার প্রথম অনুসন্ধান কাজ।এর পর ১৯১৪ সালে আরো চারবার খনিজ সম্পদ উত্তোলনের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু সবগুলো চেষ্টাই ব্যার্থ হয়।

১৮৫৭ সালে ভারতে বিদ্রোহের পর ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর থেকে ইংরেজ কেন্দ্রীয় সরকার এই এলাকার শাসন ভার নেয়।আর ১৯৪৭ সালে যখন ব্রিটিশ সরকার যখন ভারত উপ মহাদেশকে ভারত, পাকিস্তান দুটো দেশে ভাগ করে স্বাধীন করে দেয় তখন এই এলাকা পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিতি লাভ করে।১৯৬৪ সালে এখানে শিপব্রেকিং ইর্য়াডের যাত্রা শুরু হয়।ফৌজদারহাটের উপকূলবর্তী এলাকায় এমভি এলপাইন নামে ২০,০০০ মেট্রিক টনের একটি জাহাজ কাটার মাধ্যমে চট্টগ্রাম ইস্পাত হাউস নামে প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে।১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ এলাকা মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলামের নিয়ন্ত্রনাধীন ২নং সেক্টরের অর্ন্তভূক্ত ছিল।স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে আবার শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের কাজ শুরু হয় ১৯৭১ সালে কর্ণফুলী নদীতে ধংস প্রাপ্ত একটি জাহাজ কাটার মাধ্যমে।


অজানা কোন এক ঋষির আঁকা মানচিত্র- যেটা কয়েকশো বছর ধরে সংরক্ষিত ও অনুসারিত হয়ে আসছে।

সীতাকুন্ড পাহাড়ে ঊঠার জন্য বানানো সিড়ি।






কিভাবে যাবেন ও কোথায় থাকবেনঃ ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন সকল পথেই সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাওয়া যায়। ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ, কল্যাণপুর সহ দেশের যেসকল স্থান থেকে চট্টগ্রামের গাড়ি ছাড়ে সেসব গাড়িতে করে সীতাকুন্ড যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে সকল বাসই সীতাকুন্ডে থামে। নামতে হবে সীতাকুণ্ড বাজার। আর যারা ট্রেনে করে যেতে চান তাদেরকে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ‍ঢাকা মেইল ট্রেনে উঠতে হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র এই ট্রেনটিই সীতাকুন্ড স্টেশনে যাত্রী উঠা-নামা করিয়ে থাকে। ঢাকা মেইল ট্রেনটি ঢাকা থেকে ছাড়ে রাত ১১ টায় এবং সীতাকুন্ডে গিয়ে পৌছায় সকাল ৭ টায়।
চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুন্ড যাওয়ার জন্য চট্টগ্রামের অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী পাবলিক বাস রয়েছে যেঁগুলো চট্টগ্রাম মাদারবাড়ী ও কদমতলী থেকে ছেড়ে যায়। এছাড়া অলংকার বাস স্ট্যান্ডে টেম্পু, বাস পাওয়া যায়।
সীতাকুণ্ডে থাকার ভাল যায়গা নেই। মন্দির ঘুরে চটগ্রাম ফিরে এসে রাতে থাকাই ভালো। হিন্দু ধর্মাবলম্বিরা সেবাশ্রমে রাত্রিযাপন করতে পারেন অনুমতি সাপেক্ষে।

No comments:

Post a Comment